মায়ের এক সন্তানের কাহিনী....................
কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের (গোলপার্ক) গ্রন্থবিক্রয়-বি
ভাগে একদিন বেলা এগারোটা নাগাদ একজন রিক্সাওয়ালা এসে একটি বই কিনতে চাইল। বইটির নাম সে বলতে পারল না। শুধু বললঃ “এইমাত্র একজন ভদ্রমহিলা আপনাদের এখান থেকেই একটা বই কিনে আমার রিক্সায় উঠেছিলেন। তাঁকে তাঁর গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিয়েই আমি এখানে এসেছি সেই বইখানা কিনতে। বইটির ওপরে একজন মহিলার শুধু মুখখানির বড় ছবি আছে। বইটির নাম কি আমি জানি না!” লোকটিকে ‘শতরূপে সারদা’ বইটি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো, সে এই বইটি খুঁজছে কিনা। বইটি দেখে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ব্যগ্রভাবে বললঃ “হ্যাঁ , বাবু, হ্যাঁ । এই বইটিই আমি কিনতে চাই। এটিই ঐ মহিলার হাতে আমি দেখেছিলাম!” [তখন (১৯৮৫) বইটির দাম ছিল ষাট টাকা।] রিক্সাওয়ালা জানাল, তার কাছে মাত্র দশ টাকা আছে যা সে সেদিন তখন পর্যন্ত উপার্জন করেছে। তার উপার্জনের সম্পূর্ণ অর্থ দিয়েও বইটি কিনতে পারবে না জানতে পেরে সে অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে পড়ল। বিষয়টি বিক্রয়-বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সন্ন্যাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করায় তিনি ঐ রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ “আপনি এই বইটি নিয়ে কি করবেন? আপনি কি পড়তে পারেন?” রিক্সাওয়ালা বললঃ “ না বাবু, আমি লেখাপড়া জানি না। তবে বাড়িতে আমার ছেলে আছে, সে লেখাপড়া জানে। সে এবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবে। আমি তাকে বলব, সে আমাকে পড়ে শোনাবে !” সন্ন্যাসী বললেনঃ “কিন্তু , আপনি কি জানেন, বইটি কার সম্বন্ধে লেখা-ওপরের ছবিটিই বা কার?” সে বললঃ “না, বাবু, আমি কিছুই জানি না। শুধু যে-ভদ্রমহিলাকে আমি রিক্সা করে নিয়ে যাচ্ছিলাম তাঁর হাতে ঐ বইটি আমি দেখলাম। বইয়ের ওপরের ছবিটা দেখে আমার মনে হলো, ওটি আমার মায়ের ছবি। আমার মাকে আমি খুব ছোটবেলায় হারিয়েছি। মা আমার কেমন দেখতে ছিল আমি জানি না। আমার মনে হলো, ঐ আমার মা-ওটি আমার নিজের মায়ের ছবি। তাই ভদ্রমহিলাকে নামিয়ে দিয়েই আমি এখানে ছুটে এসেছি বইটি কিনব বলে। কিন্তু বইটির দাম ষাট টাকা, আমার আছে মাত্র দশ টাকা!” বলতে বলতে লোকটি ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। সন্ন্যাসী তার কথায় এতই অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন যে, কয়েক মুহূর্ত তিনি কোন কথা বলতে পারলেন না। তারপর তিনি লোকটিকে বললেনঃ “ভাই, আপনাকে টাকা দিতে হবে না। বইটি আপনি এমনিই নিয়ে যান !” তার মিনতিতে সন্ন্যাসী তার ঐ দশটি টাকা নিতে বাধ্য হলেন। সন্ন্যাসী বইটির সঙ্গে তাকে তার ‘মায়ের’ একখানি ছবিও উপহার দিলেন। বই ও ছবি পেয়ে লোকটির মুখে আনন্দ যেন উপচে পড়ল! তার দুই চোখ বেয়ে নেমতে লাগল অবিরল ধারা। এমন যে মা, যাঁর মধ্যে আমাদের মতো মাতৃহারা সন্তানেরা তাঁদের মাকে খুঁজে পাই, শান্তি পাই তাঁর চির স্নেহ ছায়ায়। তাঁর বিশ্বজোড়া কোল পাতা রয়েছে, একবার শুধু তাঁকে "মা" বলে ডাকার অপেক্ষা।
কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের (গোলপার্ক) গ্রন্থবিক্রয়-বি
ভাগে একদিন বেলা এগারোটা নাগাদ একজন রিক্সাওয়ালা এসে একটি বই কিনতে চাইল। বইটির নাম সে বলতে পারল না। শুধু বললঃ “এইমাত্র একজন ভদ্রমহিলা আপনাদের এখান থেকেই একটা বই কিনে আমার রিক্সায় উঠেছিলেন। তাঁকে তাঁর গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিয়েই আমি এখানে এসেছি সেই বইখানা কিনতে। বইটির ওপরে একজন মহিলার শুধু মুখখানির বড় ছবি আছে। বইটির নাম কি আমি জানি না!” লোকটিকে ‘শতরূপে সারদা’ বইটি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো, সে এই বইটি খুঁজছে কিনা। বইটি দেখে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ব্যগ্রভাবে বললঃ “হ্যাঁ , বাবু, হ্যাঁ । এই বইটিই আমি কিনতে চাই। এটিই ঐ মহিলার হাতে আমি দেখেছিলাম!” [তখন (১৯৮৫) বইটির দাম ছিল ষাট টাকা।] রিক্সাওয়ালা জানাল, তার কাছে মাত্র দশ টাকা আছে যা সে সেদিন তখন পর্যন্ত উপার্জন করেছে। তার উপার্জনের সম্পূর্ণ অর্থ দিয়েও বইটি কিনতে পারবে না জানতে পেরে সে অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে পড়ল। বিষয়টি বিক্রয়-বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সন্ন্যাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করায় তিনি ঐ রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ “আপনি এই বইটি নিয়ে কি করবেন? আপনি কি পড়তে পারেন?” রিক্সাওয়ালা বললঃ “ না বাবু, আমি লেখাপড়া জানি না। তবে বাড়িতে আমার ছেলে আছে, সে লেখাপড়া জানে। সে এবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবে। আমি তাকে বলব, সে আমাকে পড়ে শোনাবে !” সন্ন্যাসী বললেনঃ “কিন্তু , আপনি কি জানেন, বইটি কার সম্বন্ধে লেখা-ওপরের ছবিটিই বা কার?” সে বললঃ “না, বাবু, আমি কিছুই জানি না। শুধু যে-ভদ্রমহিলাকে আমি রিক্সা করে নিয়ে যাচ্ছিলাম তাঁর হাতে ঐ বইটি আমি দেখলাম। বইয়ের ওপরের ছবিটা দেখে আমার মনে হলো, ওটি আমার মায়ের ছবি। আমার মাকে আমি খুব ছোটবেলায় হারিয়েছি। মা আমার কেমন দেখতে ছিল আমি জানি না। আমার মনে হলো, ঐ আমার মা-ওটি আমার নিজের মায়ের ছবি। তাই ভদ্রমহিলাকে নামিয়ে দিয়েই আমি এখানে ছুটে এসেছি বইটি কিনব বলে। কিন্তু বইটির দাম ষাট টাকা, আমার আছে মাত্র দশ টাকা!” বলতে বলতে লোকটি ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। সন্ন্যাসী তার কথায় এতই অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন যে, কয়েক মুহূর্ত তিনি কোন কথা বলতে পারলেন না। তারপর তিনি লোকটিকে বললেনঃ “ভাই, আপনাকে টাকা দিতে হবে না। বইটি আপনি এমনিই নিয়ে যান !” তার মিনতিতে সন্ন্যাসী তার ঐ দশটি টাকা নিতে বাধ্য হলেন। সন্ন্যাসী বইটির সঙ্গে তাকে তার ‘মায়ের’ একখানি ছবিও উপহার দিলেন। বই ও ছবি পেয়ে লোকটির মুখে আনন্দ যেন উপচে পড়ল! তার দুই চোখ বেয়ে নেমতে লাগল অবিরল ধারা। এমন যে মা, যাঁর মধ্যে আমাদের মতো মাতৃহারা সন্তানেরা তাঁদের মাকে খুঁজে পাই, শান্তি পাই তাঁর চির স্নেহ ছায়ায়। তাঁর বিশ্বজোড়া কোল পাতা রয়েছে, একবার শুধু তাঁকে "মা" বলে ডাকার অপেক্ষা।
No comments:
Post a Comment